wb_sunny

Breaking News

প্রভুর আগমন-প্রত্যাশায় || কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি || বাংলা খ্রীষ্টিয়ান নিউজ

প্রভুর আগমন-প্রত্যাশায় || কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি || বাংলা খ্রীষ্টিয়ান নিউজ

আগমনকালের তৃতীয় সপ্তাহে আমরা ইতিমধ্যে প্রবেশ করেছি। ডিসেম্বর ১৬ থেকে প্রভু যীশুর জন্মের নভেনা শুরু হবে। নভেনা একটি বিশেষ সময় যখন খ্রিষ্টীয় চিন্তা-ধ্যান, আচার-আচারণ ও প্রার্থনা-সাধনার মধ্য দিয়ে প্রভু যীশুর আগমনের পথ প্রস্তুত করি।
যীশু এসেছেন গোশালা ঘরে। গোশালা ঘর স্মরণ করিয়ে দেয় একদিকে মানুষের বাস্তব অবস্থা ও অযোগ্যতা আবার অন্যদিকে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা ও নম্রতা।
এ বছরের প্রেক্ষাপটে গোশালা ঘর প্রকাশ করে: করোনার কারণে বিশ্বের ও আমাদের দেশের বর্তমান সংকটময় মুহূর্ত। চিন্তা করতে পারি যে, যীশু হয়তো এবার বড়দিন ও নতুন বছরের কোন এক সময় “করোনা-ভ্যাকসিন”Ñ হয়ে আসবেন। দেশজুড়ে “ভাস্কর্য” নিয়ে বাক-বিতণ্ডার মাঝে বড়দিন হয়তো আসবে মানব-কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি যীশুর ন্যায় শ্রদ্ধা-সম্মান ওÑ একাত্মতা নিয়ে। পদ্বাসেতুর মতো মানুষের মাঝেÑ আসবে সম্পর্কের সেতুবন্ধন।
আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও খ্রিষ্টীয় সমাজিক জীবনেও গোশালা ঘরের মতো পরিবেশ আছে যেখানে যীশু আসতে চান ও আসবেন তিনি, যদি গোশালা ঘরের দরজাটি খুলে দিই, উম্মুক্ত করে রাখি এবং নম্রভাবে তাঁকে গ্রহণ করি।
গোশালা ঘর হিসেবে যীশুকে গ্রহণ করার একটি মৌলিক ভাব হল এই সত্য স্বীকার করা যে, আমি অযোগ্য, আমি পাপী, আমি পাপ করি: কথায়, লেখালেখি ও যোগাযোগের মাধ্যমে, কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে বিদ্বেষ পোষণ ক’রে, অন্যকে গালমন্দ শুনিয়ে, অন্যের বিচার ও অবিচার ক’রে, অন্যের সুনাম নষ্ট করে, মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে, রাগ ও একগুয়েমিতা প্রকাশ ক’রে, ইত্যাদি। তাছাড়া আমরা আরও পাপ করি যখন: যখন খ্রিষ্ট যীশুর কথা, শিক্ষা, নির্দেশনা, আদর্শ ও দৃষ্টান্ত অনুসরণে উদাসীনতা ও অনীহা প্রকাশ করি, ঈশ্বরের বাণী শুনে আত্মজীবন পর্যালোচনা করি না, পারিবারিক প্রার্থনা ও গির্জার উপাসনা-অন্ষ্ঠুানে নিয়মিত যোগদান করি না, পাপস্বীকার সাক্রামেন্ত গ্রহণ ক’রে পাপের ক্ষমা লাভ করতে ও জীবনকে সুন্দর ও খ্রিষ্টীয় করতে উৎসাহী হই না, ইত্যাদি।
খ্রিষ্টের অনুসারী হিসেবে মণ্ডলীতে সবার Ñ হোক সে পোপ, কার্ডিনাল, বিশপ, ফাদার-ব্রাদার সিস্টার, খ্রিষ্টভক্ত-জনগণ ÑÑ সবার জীবনের সাধনা হবে জীবনকে খ্রিষ্টের অনুরূপ করে তোলা। এক কথায় নিজের ব্যক্তিজীবন, পরিবার এবং মণ্ডলীকে আরও খ্রিষ্টীয় করে তোলা। আমরা সবাই যীশুতে দীক্ষিত হয়েছি এবং ঈশ্বরের সন্তান হয়েছি। এটাই আমাদের মৌলিক মর্যাদা ও পরিচয়; আমরা সবাই একই খ্রিষ্টদেহের অঙ্গভুক্ত হয়েও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিচিত্রতা অনুসারে বিভিন্ন দায়িত্ব পেয়েছি; তবে আমাদের সকলার আহ্বান এক; সবাই এক হয়ে পবিত্র হওয়া হচ্ছে আমাদের সবার অভিন্ন লক্ষ্য।
দীক্ষাস্নানের ফলে প্রতিজন খ্রিষ্টভক্ত (ভক্তজনগণসহ) একজন যাজক রূপে জীবন পবিত্র করবে, অর্থাৎ যীশুর সাথে এবং পরস্পরের সাথে মিলন সৃষ্টি করবে; একজন প্রবক্তা হিসেবে মিলনের শিক্ষা ও সাক্ষ্য দেবে; একজন রাজা হয়ে ঐশরাজ্য প্রতিষ্ঠা ও সমাজে মিলন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নেতৃত্ব, পরিচালনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে। মণ্ডলীতে এই মর্যাদা ও দায়িত্ব সবার জন্য। এই দায়িত্ব যেন খ্রিষ্টবিশ্বাসী সকলে পালন করতে পারে সেই জন্যে মণ্ডলীতে রয়েছে সেবাকারী যাজক (বিশপ) ও সন্ন্যাসব্রতী ফাদার-ব্রাদার-সিস্টার। তারা কোনভাবে খ্রিষ্টভক্তদের মর্যাদা ও দায়িত্ব অশ্রদ্ধা করতে পারে না, বরং তাদের নিকট দেয়া খ্রিষ্টীয় দায়িত্ব ও সেবা পালনে যে আধ্যাত্মিকতা এবং শিক্ষা-সাক্ষ্যদানে যে নেতৃত্ব ও পরিচালনা প্রয়োজন সেখানে সহায়তা দান করবে।
বড়দিনে প্রভু যীশুর আগমনকে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে সত্য করে তোলার জন্য। এর জন্য চাই প্রত্যেকের প্রস্তুতি। আমাদের সমাজের “মরুপ্রান্তরে একটি কণ্ঠস্বর ঘোষণা করে চলেছেঃ তোমরা প্রভুর আসার পথ প্রস্তুত করে রাখ, সোজা সরল ক’রে তোল তাঁর আসার পথ।” (মথি ৩:১-৩)
উপরোক্ত চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা ও আদর্শে যীশু আমাদের মাঝে জন্মগ্রহণ করুক। গোশালা ঘরের মতো আমি যদিও অযোগ্য, তথাপি যীশু আসতে চান, জন্ম নিতে চান আমার জীবনে, আমাকে তিনি পরিত্রাণ করতে চান। তাঁকে জীবনে গ্রহণ করার কী কোন সাধনা করব না? আমার জীবনটা কী পাল্টিয়ে তার জন্য পথ করে দেব না? গোশালা ঘরে কী যীশুর জন্মের জন্য স্থান হবে না? তিনি কী আমাদের জীবনে আগমন করবেন না?। বৃথাই হবে তার জন্ম? বড়দিন কী শুধু জাগতিকতা, আনুষ্ঠানিকতা ও বাহ্যিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে? প্রভুর আগমনকালে এটাই হচ্ছে আমাদের কাছে মূল প্রশ্ন।
উপরে উল্লেখিত ভাবনায় যদি আমরা নিজেদেরকে দেখি তা হলে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন এবং খ্রিষ্টীয় জীবনের মধ্যে কোন অসামঞ্জস্য বা বৈপরীত্য বা পার্থক্য থাকার কথা নয়। আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও মাণ্ডলিক জীবন সবই খ্রিষ্টীয় জীবন এবং সবার জন্য সে জীবন।
আমাদের দেশের মণ্ডলীর মধ্যে যে আলাপ-আলোচনা নানা মহলে ও নানা যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে হচ্ছে তাঁর যে ভাবগুলো দেখা যায় তার কয়েকটি উল্লেখ করছি: প্রথমতঃ খ্রিষ্টীয় ব্যাক্তিজীবন, পরিবার, সামাজিক দল এবং মণ্ডলীর মধ্যে আরও সক্রিয় হওয়ার একটা গভীর চেতনা, যদিও মাধ্যমটা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ তথ্য ও সত্য জানার সদিচ্ছা আছে, কিন্তু পদ্ধতি অনেকটা উগ্রতায় কলুষিত; দ্বিতীয়তঃ সত্য জানার জন্য সঠিক মানুষের সাথে সংলাপের অভাব, তাই সম্পর্ক গড়ে উঠছে না; তৃতীয়তঃ অপরকে বিচার করে অনেক অবিচার করা হচ্ছে; এ প্রসঙ্গে যীশু যা বলেন, পরের বিচার না ক’রে বরং নিজের দোষ শুধরে নাও (দ্র: মথি ৭:১-৫)। চতুর্থতঃ যীশুর কথা অনুসারে: “অন্যের কাছ থেকে তোমরা যেমন ব্যবহার আশা কর, তার প্রতিও তোমরা সবকিছুতেই তেমনি ব্যবহারই কর” (মথি ৭:১২)। পঞ্চমতঃ সমাজে কঠিন মুহূর্তে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ে প্রার্থনায় ঈশ্বরের ইচ্ছা কী তা প্রথমতঃ জানা। যীশুর কথা অনুসারে: যে ঈশ্বরের রাজ্য প্রথমে খোঁজ করে তাকে অন্য সবকিছুই বাড়তি দেওয়া হবে (দ্র: মথি ৬:৩৩)। ষষ্ঠতঃ অতীতকালের সমাজ-চিন্তা ও সমস্যা-সমাধান দিয়ে সাম্প্রতিক সমাজে তা হুবহু প্রয়োগ ক’রে সমস্যা সমাধান করার প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টা। পরিশেষে এই জগতে মানুষের সর্বক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে তা কোন খ্রিষ্টবিশ্বাসী অস্বীকার করতে পারবে না। সেই পরিবর্তন মণ্ডলীতেও প্রভাব ফেলেছে কেননা খ্রিষ্টবিশ্বাসীরাও এই জগতের মানুষ। তবে পূর্বের সকল মূল্যবোধ পরিবর্তন করতে হবে তা অবশ্যই নয়।
আমাদের সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে হলে খ্রিষ্টান হিসেবে খ্রিষ্টীয় মূল্যবোধ ও খ্রিষ্টীয় শিক্ষা দ্বারা সমাধান খুঁজতে হবে। এই প্রসঙ্গে যীশুর একটি উত্তম শিক্ষা আছে যা আমাদের জন্য প্রযোজ্য। আর সেটি হচ্ছে কোন ধর্মভাইকে অন্যায়ের পথ থেকে ফিরিয়ে আনার রীতি। যীশুর এই শিক্ষাটি আমাদের অনেক আলো দিতে পারে: মথি লিখিত মঙ্গলসমাচারে যীশু কথাগুলো উদ্ধৃতি দিয়ে যে চারটা ধাপ আমরা লক্ষ্য করছি তা উল্লেখ করি:
“তোমার ভাই যদি কোন অন্যায় করে,
(১ম ধাপ): “তুমি গিয়ে, যেখানে শুধু তুমি আর সে-ই আছ, সেখানে তার অন্যায়টা বুঝিয়ে দাও। সে যদি তোমার কথা শোনে, তার মানেই, তুমি তোমার ভাইকে ফেরাতে পেরেছ।”
(২য় ধাপ): “কিন্তু সে যদি না শোনে, তাহলে তুমি বরং দু’ একজনকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও, যাতে দু’তিনজন সাক্ষীর সাহায্যেই সমস্ত ব্যাপারটা একটি নিষ্পত্তি হতে পারে।”
(৩য় ধাপ) “সে যদি তাদের কথাও শুনতে না চায়, তাহলে তুমি বরং মণ্ডলীকেই সব কথা জানাও।”
(৪র্থ ধাপ) “আর সে যদি মণ্ডলীর কথাও শুনতে না চায়, তাহলে তুমি তার সাথে এমন ব্যবহারই কর, সে যেন কোন বিধর্মী বা কোন করগ্রাহক।” (মথি ১৮ঃ১৫-১৭)
উপরোক্ত পুনর্মিলনের চারটি ধারা যীশুর মন নিয়ে বুঝতে সবারই চেষ্টা করা উচিত এবং অনুসরণ করা উচিত। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তকারী উভয়েরই জন্য এই শিক্ষাটা বুঝে নেওয়া। প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে সংলাপ করা উচিত বিভিন্ন মহলে।
এখানে আমার আলোচনার প্রধান উদ্দেশ্যে হচ্ছে আসছে বড়দিনে প্রভু যীশুর আগমনকে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে সত্য করে তোলার জন্য। এর জন্য চাই প্রত্যেকের প্রস্তুতি। আমাদের সমাজের “মরুপ্রান্তরে একটি কণ্ঠস্বর ঘোষণা করে চলেছেঃ তোমরা প্রভুর আসার পথ প্রস্তুত করে রাখ, সোজা সরল ক’রে তোল তাঁর আসার পথ।” (মথি ৩:১-৩)
আগমনকালে, বড়দিনে ও সর্বসময়ে আমাদের সবার প্রার্থনা: “এসো প্রভু যীশু, এসো” ।
আগমনকাল, ২০২০ খ্রি.

সূত্র:ডিসিনিউজ
Android Apps on Google Play

Tags

Newsletter Signup

Sed ut perspiciatis unde omnis iste natus error sit voluptatem accusantium doloremque.

Ads