বোবা প্রেম
ভালোবাসা নাকী ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়।বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নাকী ভালোবাসার সংজ্ঞা বদলে যায় । যে প্রিয় মানুষটাকে ছাড়া আপনার জীবন অসর্ম্পূণ।যাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন, যাকে ছাড়াও জীবন একদিনও চলবে না। সে ধারণা একদিন ভূল বলে প্রমানীত হবে। জীবন বহমান কারো অনুপস্তিতে জীবন থেমে থাকে না।একটা কথা প্রায় শোনা যায়,” আমি তোমাকে ভালোবাসি নিজের চেয়েও বেশি”।আমার কাছে এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কিছু হতে পারে না । মানুষ নিজের চেয়ে অন্য কাউকে বেশি ভালোবাসতে পারে না।হতে পারে মা-সন্তানের ভালোবাসার সর্ম্পক। বাবা সাথের ছেলে-মেয়ের সর্ম্পককাছের মানুষের সাথে সর্ম্পক । পৃথিবীতে রক্তের সর্ম্পক বলতে কিছু নেই ,স্বার্থ যতদিন সর্ম্পক ততদিন।স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ভুলে যায় । পৃথিবীতে ব্যস্ততা বলতে কোন কিছু নেই ,পৃথিবীতে সবাই ব্যস্ত ,মায়ের কোলের শিশুটাও ব্যস্ত আপন গন্ডিতে । কাউকে এড়িয়ে চলার নাম ব্যস্ততা।কাউকে সময় না দেওয়ার নামই ব্যস্ততা।কাউকে অবহেলা করার নামেই ব্যস্ততা। তারপরেও এরই মধ্যে মানুষ- মানুষ কে ভালোবাসে ,ভালোবাসার মধ্যে অনেক স্বার্থ থাকে ,থাকে অনেক কারণ!অনেক সময় মানুষ দেহ ভোগের কারণে ভালোবাসের অভিনয় করে।স্বার্থ হাসিল হলে ভালোবাসাও পুরিয়ে যায়।তারমানে কি পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছু নাই ??? একটা প্রবাদ আছে সরকারী চাকরী আর সত্যিকার ভালোবাসা নাকি যোগ্য ছেলেরা পায় না, কথাটা পুরোটা সত্যিই না হলেও মিথ্যা নয়।যারা ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে তারা নাকি ভালোবাসা পায় , কিন্তু যারা প্রকৃত ভাবে ভালোবাসা তারা কখনেই ভালোবাসা পায় না, মানুষের মন রংধনুর মতো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। কখন যে, কাকে ভালো লাগে বলা যায় না । তবে কাউকে ভালোলাগা অপরাধ নয়।কিন্তু সব ভালো লাগা ভালোবাসায় পুর্ণতা পায় না , কারণ ভালো লাগা আর ভালোবাসা এক না।কার জন্য বুকের মধ্যে শ‚ন্যতা অনুভব করা,কার সাথে একপথে চলার জন্য তীব্র ইচ্ছা ,তাকে নিয়ে ভাবার নাম ভালোবাসা ।
প্রথমে দেখা, দেখা থেকে ভালোলাগা , তারপর চেনা-জানা ,নিজেদের মধ্যে বোঝা পড়া ,বিশ্বাস সৃষ্টি এভাবে ভালোবাসার জম্ম হয়।ভালোবাসা একটি তালগাছের মতো ,একটি বীজ থেকে যেমন একটি প‚ণাঙ্গ গাছের সৃষ্টি হয় তিলে তিলে যতœ্র করতে। আবার একটি গাছ বেড়ে উঠতে অনেক সময় লাগে । অনেক কষ্ট পরিশ্রেম করতে হয় ,কিন্তু একটা প‚র্ণাঙ্গ গাছ নষ্ট করতে মাত্র অল্প কিছু সময় লাগে করাত দিয়ে কাঁটতে।তেমনি যদি ভালোবাসায় কখন ও অবিশ্বাস প্রবেশ করে সেই অবিশ্বাস করাতের মতো ভালোবাসাকে নষ্ট করে দেয় ,তাই ভালোবাসায় বেঁচে থাকে বিশ্বাসের উপর , বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা কখনই টিকে থাকতে পারে না । রংধনুতে যেমন সাতটি রং থাকে ,একারণে রংধনু এত সুন্দর দেখায় ,তেমনি ভালোবাসায় দুঃখ -কষ্ট ,হাসি –কান্না মিশে থাকে বলে ,ভালোবাসা মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকা , শুনেছি মেয়েরা নাকি সহজে প্রেমে পড়ে না , আবার প্রেমে পড়লে সহজে ভূলতে পারেনা,যখন একটা মেয়ে কারও প্রেমে পড়ে তখন তার জন্য সব কিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। এমনকি নিজের পরিবারকে বির্সজন দিয়ে দেয় ,পরিবার বির্সজন দেওয়া আমার মতে ঠিক না ।কারণ একটা মেয়েকে তিলে তিলে অনেক কষ্ট ক্ের পরিবার বড়ো করেছে ।পরিবারে অবাধ্য হয়ে কোন কিছু করলে আমার মনে হয় জীবনে সুখী হওয়া যায় না । একটা ছেলে যখন প্রেমে পড়ে তখন দুনিয়াকে জানান দেয় কিন্তু "ভদ্র ছেলেদের জন্য মেয়েদের মনে কখনও প্রেম জাগে না। যা জাগে সেটা হল সহনুভ‚তি"। তাই এটাকে ভেবে মনকে কষ্ট দিয়ো না। হয়ত তুমি কারো ভালবাসায় কাছে হেরেছ, তুমিতো হারিয়ে যাওনি।হে যুবক তোমাকে বলছি 'শেষ প্রেম' বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পরে তখন প্রতিটি প্রেমই 'প্রথম প্রেম'।হে যুবক তোমাকে আবারও বলছি, সবাই তোমাকে কষ্ট দিবে। তোমাকে শুধু এমন একজন কে খুঁজে নিতে হবে যার দেওয়া কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে।
আমার এক ক্লোজ বন্ধু কাওসার ,এমবিএ স্বার্থক ভাবে সর্ম্পূণ করে,একটা বিজনেস ফার্মে জয়েন্ট করেছিল । বাবার- মায়ের আদরের বড় ছেলে , ছেলেটা ভার্সিটি জীবনে কখনো মেয়ে বন্ধুদের সাথে খোলা-খুলি ভাবে কথা বলত না।সে যে ফার্মে জয়েন্ট করেছিল, তার সিনিয়র এক কলিক এর সাথে কাজের কারণে অনেক ভালো বন্ধৃুত্ব হয়ে উঠে।অফিস শেষে তারা নিয়মিত এক সাথে বের হতো।মাঝে মাঝে চা- কফির আড্ডা দিত।মেয়েটা অনেক ভালো ছিল।দেখতে মাশ-আল্লাহ । আর কাওসার যেমন স্মার্ট তেমনি বিলিয়েন্ট ।অফিসের কাজ তারা ভাগাভাগি করে সক্ষমতার সহিত সর্ম্পূণ করতে।এতে তারা যেমন বসের প্রশংসা পেত ,তেমনি কাজে প্রাণ চঞ্চলা ফিরে পেত।সবকিছু ভালোই চলছিল এর মধ্যে হঠাৎ করে একদিন কাওসারের বাবা অসুস্থ হয়ে যায় ,প্রচন্ড অসুস্থ।এবং অবশেষে তিনি মারা যান ,যেটা ছিল কাউচারের জন্য অনাকাঙ্কিত । তবে মানুষ যে মরণশীল ,মরণ যে কোন সময় আমাদেরজীবনে নেমে আসতে পাওে,তা বলা যায় না । যখন যার হায়াত কমে যাবে ,তখন তাকে মরণে জন্য প্রস্তুত হতে হবে । বাবার মৃত্যুর পর এই কঠিন সময়ে ,সবার আগে জাারা তার বন্ধুত্বেও হাত বাড়িয়ে দেয় ,কারণ একজন কলিক হিসাবে কিংবা বন্ধু হিসাবে।কারণ জারাও বাবা নেই।আছে শুধু মা।মা ছাড়া জারার পরিবারে আর কেই নেই । আর কাওসারে একটা ছোট ভাই ও বোন আছে। বাবার অনুপস্তিতে বড়ো ভাই হিসাবে,কাওসারের উপর আপনা- আপনি ভাবে সব দায়িত্ব এসে পড়ে । কাওসারে এই পিতৃবিয়োজনে,অনেকটা কাছে আসার চেষ্টা করে জারা । তাদের এত কাছাকাছি আসাকে অফিস কলিকরা ততোটা খারাপ ভাবে নেয়নি । কারণ তারা ভেবে ছিল , তাদের মধ্যে কোন সর্ম্পক থাকলে খারাপ হবে না । বরং ভালোই হবে।কারণ একজন অন্য জনের জন্য উপযুক্ত ছিল । তারা দুজন দুজনকে অনেক বেশি পছন্দ করত । কিন্তু কেই কাউকে বলতে পারেনি । কিংবা বলার মতো সুয়োগ কোন দিন হয় নি । কিংবা কোন সুয়োগকে কাজে লাগাতে পারেনি । তারা একসাথে ছিল একসাথে চলেছে এবং একসাথে একটা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছে । জারা চাইত কাওসার তাকে ,তার ভালোলাগার কথা বলুক কিন্তু কাওসার চাইত, জারা যেন তাকে তার ভালো লাাগার কথা বলে।এমননি ভাবে সবকিছু চলতেছিল ।জারাকে একটু তার অফিস বস্ পছন্দ করত। তা কারো জানা ছিল না।বস্ প্রায় সময় জারাকে কাজে-অকাজে ডাকত এবং বিভিন্ন বিষয়ে জিঞ্জাসা করত ,পরিবারের খোঁজ খবর নিত। বিষয়টা জারা কাছে স্বাভাবিক ছিল।কিন্তু কাওসার বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারত না।কারন তার খারাপ লাগত ।বিখ্যাত ইংরেজী সাহিত্যিক জন ডান বলেছেন । ঈর্শ্বা হচ্ছে ভালো লাগার একটা বহি:প্রকাশ।আপনার প্রিয় মানুষটা যখন অন্য কোন ছেলের সাথে হেসেঁ হেসেঁ কথা বলবে কিংবা একটা দীর্ঘ সময় গল্প করবে বা আড্ডা দিবে আপনি তা সহজে নিতে পারবেন না। কাওসারের বেলায় ঠিক তেমনি । যেহেতু জারা ও কাওসারে সর্ম্পকটা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সেহেতু অনেক কথা বলতে চাইলেও বলতে পারত না।কিন্তু জারা কাওসারকে অন্য মেয়ে কলিক এর সাথে কথা বলতে দিত না । একটা প্রবাদ আছে ,ছেলেদের নাকী বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফোঁটে না অথাৎ তারা অনেক কথা বলতে চেয়ে বলতে পারে না।তাদের কিছু বলতে গেলে অনেক কিছু বিবেচনা করে বলতে হয়। হঠাৎ একদিন জারার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে,তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগে কিন্তু জারা কাছে এতা টাকা ছিলনা।এমন অবস্থায় অফিস বস্ করিম সাহেব এগিয়ে এসেছিল।মায়ের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব টাকা দেয় হয়ত করিম সাহেব সেসময় টাকা দিয়ে সাহায্য না করলে অনেক বড়ো সমস্যা হয়ে যেতে পারত। জারা মা সুস্থ হয়ে উঠলে পরে একদিন বস্ জারার বাসায় আসে ,জারার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে মা অনেক বেশি চিহ্নিত জারাকে নিয়ে। বস্ করিম সাহেবকে জারার বিয়ের বিষয়ে সব ভার দেয় ,করিম সাহেবের অনেক বয়স হলেও সে কিন্তু এখন ও অবিবাহিত।একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।অবশেষে জারার মতামত না নিয়ে মা করিম সাহেবের সাথে জারার বিবাহের পাকা কথা বলে ফেলে।একথা জানার পর জারার মাথা উপর বাজ পড়ে।জারা কথাটা সবার আগে কাওসারের সাথে শেয়ার করে ।অন্য দিকে কাওসার মোটেও প্রস্তুত ছিল না এমন কথা শোনার কারণ কাওসার মোটামোটিক প্রস্তুতি নিতেছিল তার ভালোলাগার কথাটা সে জারাকে জানাবে এবং পারিবারিক ভাবে আলোচনার মধ্যে দিয়ে তাদের সম্পটার্কেএকটা পূর্ণতা দিবে।কিন্তু বিদিবাম।এমন অবস্থায় কাওসারের কিছু করার থাকে না ,এবং জারাও অনেকটা নিরবে সবকিছু মেনে নেয়।কারণ করিম সাহেব তার কাছে অনেক টাকা পাবে তারচেয়ে বড় বিষয় তার বিপদের সময় এগিয়ে এসেছিল।অবশেষে তাদের বিয়েটা হয়ে যায় আর রাগ অভিমানে কাওসার চাকুরিটা ছেড়ে দিয়ে দেয়।অনেক বেশি ভেংগে পড়ে ।একে বাবাকে হারিয়েছে ,দ্বিতীয় চাকুরিটা ছেড়ে দিয়েছে তৃতীয় ভালো লাগার মানষটাকে কোন কিছু বলে ওটার আগে সে অন্য কার হয়ে গেছে।আর এমন অবস্থায় ভেংগে পড়াই স্বাভাবিক ।একদিন বাসা ফেরার পথে,রোড একসিডেন্ট করে অনেক বেশি বেলাডিং হয় হাসপাতাল নেওয়ার পথে মারা যায়।হয়তবা অনেক ভালোবাসা-ভালোলাগা প্রকাশ করার আগে এভাবে নিভিয়ে যায়
এবার পহেলা ফাল্গুনে-বসন্তের প্রথম দিনে বাঙালিকে সাজাবে কৃষ্ণচূড়া আর শিমুল ফুলে ,সবার ভালোবাসা রাঙিয়ে উঠুক ।পূর্ণতা পাক সকল বোবা প্রেম গুলো।সেন্ট ভ্যালেন্টইন্স-কাওসারের মতো জীবন নিভিয়ে যাওয়ার আগে জেনে যাক তাদের ভালোবাসার কথা গুলো প্রিয় মানুষরা। এবার ভালোবাসা দিবসের প্রতিপাদ্য এই হোক ভালোবাসা সবার জন্য।যেমনটা প্রিয় মানুষের জন্য তেমনি পরিবারর জন্য।ভালোবাসায় ভরিয়ে উঠুক এই পৃথিবীটা।থেমে যাক সকল হানাহানি যুদ্ধ-বিগ্রহ, বন্ধ হোক সকল কোলাহোল । পৃথিবীটা হোক শান্তি ময়।
ভালোবাসায় পূর্ণ হোক প্রতিটা মানুষের হৃদয়। কারণ এই প্রেম কখনই শেষ হবে না । সবার প্রতি রইল বিশ্বভালোবাসা ও বসন্তের শুভেচ্ছা । সবার জীবন থেকে মুছে যাক সকল পাপ কালিমা - ক্লানি –। নাহিদ বাবু