wb_sunny

Breaking News

নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় পবিত্র বাইবেল

নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় পবিত্র বাইবেল

 ঈশ্বর সৃষ্টির প্রথম মানুষ হিসেবে আদমকে নির্মাণ করলেন। ‘আদম’ শব্দটি পুঃলিঙ্গ-স্ত্রীলিঙ্গকেও প্রতিনিধিত্ব করে। অতঃপর পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, ‘পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।’ একটি সুখী দম্পত্তিকে দেখে সদাপ্রভু চমৎকৃত হয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘সকলই অতি উত্তম’। আমরা উপলব্ধি করি, সদাপ্রভু তিনি নিজেই পুরুষের একজন সঙ্গী দিয়েছিলেন এবং অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থাৎ একজন পুরুষ যেমন নিজের জীবন, শরীরকে ভালোবাসে; অনুরূপভাবে তার সঙ্গীকেও ভালোবাসার বাসনা ও আকাঙ্খা দিয়েছেন। সঙ্গীকে দু’হাতে আগলে রাখার একটি নৈতিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।

পবিত্র বাইবেলে অনৈতিক আচরণ, নারীর সম্ভ্রম ও অনাচারের বিবরণ পাওয়া যায়। নোহের মহাজল প্লাবনের প্রাক্কালে দেখি যে, ‘তখন ঈশ্বরের পুত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া, যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল। …আর সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীতে মানুষ্যের দুষ্টতা বড় এবং তাহার অন্তঃকরণের চিন্তা সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ।’ সদাপ্রভু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন, ক্ষুব্ধ হলেন এবং রুষ্ঠ হয়ে পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য সামান্যতম ব্যথিত হলেন না। নারীরা পুরুষ কর্তৃক যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানী ও শঠতার মতো ঘটনায় যুক্ত হয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মন্দ কাজে নিমগ্ন হয়েছিলেন। নারীর প্রতি কতোটুকু পরিমাণ অবিচার করা হয়েছে, শক্তিতে, ক্ষমতায়, ব্যভিচারে; যার জন্যে মোশির মাধ্যমে সদাপ্রভু নিজ হস্ত দ্বারা ১০ আজ্ঞা লিপিবদ্ধ করে মানুষকে জানাতে আকাঙ্খী হয়েছেন। ইতোপূর্বে অব্রাহামের জীবনকালের বর্ণনায় প্রাপ্ত হই, সদোম ও ঘমোরা অজাচার, অনাচারে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। নারী-পুরুষের যৌন সংক্রান্ত অপরাধ এতোই বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে, সদাপ্রভু ওই দুটি নগরের শুধুমাত্র মানুষকে নয়, মাটিকে পুড়িয়ে ক্ষান্ত হয়েছেন। লোটের পরিবার ব্যতিত কেহ-ই ঈশ্বরের গন্ধক ও অগ্নি বৃষ্টি হতে রেহাই পাননি।
নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় সদাপ্রভু আরো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। ইস্রায়েল জাতিকে শূচি ও পবিত্র রাখতে অনেকগুলো নীতিমালা, আদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। লেবিয় পুস্তকের ১৮:৫-২৪ পদের আলোকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো রয়েছেÑ


১. নিজের মায়ের সাথে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ;
২. সৎ মায়ের সাথে দৈহিক মিলন নিষিদ্ধ;
৩. নিজের বোন বা সৎ বোনের সাথে ;
৪. ছেলে বা মেয়ের ঘরের নাতিনীর সঙ্গে;
৫. সৎ মায়ের গর্ভের বোন;
৬. পিসীমার সঙ্গে;
৭. মাসীমার সঙ্গে;
৮. বাবার কোনো ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে;
৯. ছেলের বৌয়ের সঙ্গে;
১০. ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে;
১১. একই সঙ্গে কোন স্ত্রীলোক এবং তার মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ;
১২. সেই স্ত্রীলোকের ছেলে বা মেয়ের ঘরের নাতনীর সঙ্গে ;
১৩. স্ত্রী বেঁচে থাকতে স্ত্রীর বোনকে সতীন হিসেবে বিয়ে করা যাবে না;
১৪. মাসিকের সময়কালে কোনো স্ত্রীলোকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক চলবে না;
১৫. অন্য কারো স্ত্রীর সঙ্গে দেহে মিলিত হয়ে নিজেকে অশূচি করা যাবে না;
১৬. স্ত্রীলোকের সঙ্গে দেহে মিলিত হবার মতো করে পুরুষের সঙ্গে দেহে মিলিত হওয়া চলবে না;
১৭. পশুর সঙ্গে দেহে মিলিত হয়ে কোনো পুরুষ নিজেকে অশূচি করা চলবে না;
১৮. কোনো পশুর সঙ্গে কোনো স্ত্রীলোকের দেহের মিলন চলবে না;
পবিত্র বাইবেলে ইতিহাসে বহু বিবাহের বর্ণনাও অবলোকন করেছি। আদিপুস্তকে ৪:১৯ পদে দেখি যে, লেমকের দুই স্ত্রী ছিলো। যাকোবের দু’জন স্ত্রী ও আরো দু’জন উপস্ত্রী ছিলো; গিদিয়নের অনেক স্ত্রী ছিলো। জ্ঞানের রাজা হিসেবে খ্যাত শলোমনের অনেক স্ত্রী ছিলো। তবে সৃষ্টির সূচনাতে শাস্ত্রে পাই, ‘তারা দু’জন একদেহ হবে’। বাইবেল বলে না ‘তারা তিনজন অথবা চারজন একদেহ হবে।’ কোনো পুরুষ একই সঙ্গে একের বেশি স্ত্রী সঙ্গে একদেহ হতে পারে না।
নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে পিতা ঈশ^র সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোকে আরো ব্যাপক করেছেন। নিজ হস্তে লিখিত দুটি প্রস্তর ফলকে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো জানিয়েছেন। স্বহস্তে লিখিত ১০ আজ্ঞার দু’টিতেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনÑ
১. ব্যভিচার করিও না;
২. তোমার প্রতিবেশীর গৃহে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর স্ত্রীতে, কিংবা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিংবা তাহার গরুতে কি গর্দ্দভে, প্রতিবেশীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না।
প্রভু যিশু খ্রিষ্ট এইজন্যে ব্যভিচারের নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেনÑ ‘যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।’ অর্থাৎ আমাদের হৃদয়, মন-অন্তরকে সূচি শুভ্র করতে হবে। প্রতিবেশী সে হোক না অন্য ধর্মের কিন্তু আমাদের শাস্ত্রানুযায়ী সেও আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীকে নিজ তূল্য ভালোবাসলে তার প্রতি কোনোরূপ অমঙ্গল, অসদাচারণ, লোভ-লালসা কিংবা ক্ষতি করা যাবে না। সাধু পৌল বিশ^াসীদের সতর্ক করেছেন, ‘সমস্ত রকম ব্যভিচার থেকে পালিয়ে যাও। মানুষ অন্য যে সব পাপ করে তা তার দেহের বাইরে করে, কিন্তু যে ব্যভিচার করে সে নিজের দেহের বিরুদ্ধেই পাপ করে।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘… যে কোন রকম ব্যভিচার হোক না কেন, যারা সেই দোষে দোষী ঈশ^র তাদের শাস্তি দেবেন
(ইব্রীয় ১৩:৪)। পিতা ঈশ^রের একজাত পুত্র যিশু খ্রিষ্টই প্রথম নারী অধিকার, শিশু অধিকার, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরীর, জাতিগত সংঘাত, বর্ণবৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। যৌনকর্মীকে (যোহন ৮:১-১১) যীশুর কাছে বিচারের জন্য ধরে আনা হলে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিয়ে বললেন, ‘যাও, এ কাজ আর কখনো করো না’। যিশু বুঝেছিলেন যে, এই অসহায় নারীট আর্থিক ও সামাজিক বিধান এবং পুরুষের লালসার শিকার। সুতরাং দোষী নারী নয়, দোষী সমাজ। তাই তিনি তাকে দোষী করেননি।
প্রভু যীশু খ্রিষ্টের কাজে কিংবা সুসমাচারের অগ্রযাত্রায় নারীদের ভূমিকাকে কখনোই অবমূল্যায়ণ করা যাবে না। পুরাতন বা নতুন নিয়মে নারীদের সাহসিকতা ও অংশায়ন পবিত্র বাইবেলের ঘটনাবলীকে সমৃদ্ধ করেছে। আমাদের সমাজের সমালোচকরা অনেক সময় সমালোচনা করতে উদ্যেত হয়ে থাকেন কিন্তু সত্যিকার অর্থে নারীদের বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করতে অপারগ। রাজা শলোমনের কবিতায় পরমগীতে পাওয়া যায়Ñ
‘আমি আমার প্রেমিকেরই,
তাঁর বাসনা আমারই প্রতি।
প্রেমিক আমার, এসো, মাঠে যাই,
গ্রামাঞ্চলে রাত্রিযাপন করব।
চল, প্রতূষে উঠে আঙুরখেতে যাই;
দেখি, আঙুরলতা পল্লবিত হয়েছে কিনা,
তাতে মুকুল ধরেছে কিনা,
ডালিম গাছের ফুল ফুটেছে কিনা;
সেইখানে তোমাকে আমার প্রেম নিবেদন করব।
প্রেমফল সুবসা ছড়াচ্ছে;
আমার দ্বারে দ্বারে রয়েছে
নবীন ও পুরাতন সবরকম উত্তম উত্তম ফল;
প্রেমিক আমার, তা আমি তোমারই জন্য গচ্ছিত রেখেছি’ (পরমগীত ৭: ১১-১৪, জুবিলী বাইবেল)।
 -মিথুশিলাক মুরমু
( সংগ্রহীত লেখা )
Android Apps on Google Play

Tags

Newsletter Signup

Sed ut perspiciatis unde omnis iste natus error sit voluptatem accusantium doloremque.

Ads