শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ফাদার টিমকে স্মরণ
কারিতাস বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা ডঃ রেভাঃ ফাঃ হিউবার্ট লিটন গমেজ এর প্রার্থনা এবং নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন ফ্রান্সিস রোজারিও-এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ স্মরণ সভায় স্মৃতিকথা ও অনুভূতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধমীয় নেতা কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসিসহ অন্যান্য অতিথিবর্গ।
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, “ফাদার টিম বেঁচে আছেন। তিনি অমর তাঁর চিন্তায়, তাঁর কথায়, তাঁর কাজে।”
মাননীয় সংসদ সদস্য ও নির্বাহী পরিচালক, প্রিপ ট্্রাস্ট মিজ্ আরমা দত্ত বলেন, “ফাদার টিম ছিলেন আমাদের উন্নয়নধারার প্রবর্তক। উনি ছিলেন বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্রষ্টা।”
এডাব সভাপতি জয়ন্ত অধিকারী, প্রধান সমন্বয়কারী নিজেরা করি, মিজ্্ খুশি কবীর, আইপিডিএস সভাপতি সঞ্জিব দ্রং, ডঃ বেনেডিক্ট আলো ডি’ রোজারিও, নটর ডেম কলেজের উপাচার্য ডঃ রেভাঃ ফাঃ প্যাট্রিক গাফনি, সিএসসি স্মৃতিচারণ ও অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ফাদার টিম-এর বর্ণ্যাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন।
এ মহতি অনুষ্ঠানের সমাপনী লগ্নে কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিশপ জের্ভাস রোজারিও উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে গিয়ে বলেন, “ফাদার টিম বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি রচনা করেছেন। নিঃস্বার্থভাবে তিনি সেবা করেছেন গ্রামে-গঞ্জে জনপদে।”
উল্লেখ্য যে, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রলয়ংকরী ঘূণিঝড় এবং ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের দেশের অতুলনীয় ক্ষতি সাধিত হয় এই সময় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য তিনি নিজেকে পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেছিলেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ছয় মাসের জন্য ফাদার টিম মনপুরা দ্বীপে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে International Understanding ও বাংলাদেশের উন্নয়নে দীর্ঘ ৩৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ফাদার টিম ম্যাগসায়সায় পুরস্কারে ভূষিত হন। একই বছর সমাজ সেবায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করায় তিনি আবু সাইয়ীদ চৌধুরী পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পর পর তিনবার এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত তিনি South Asian Forum for Human Rights প্রতিষ্ঠা করেন ও আহ্বায়কের কাজ করেন। ২০০০ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ফাদার টিম বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেন। তাঁর এ সময়কার বিশেষ বিশেষ কাজগুলো ছিল: আদিবাসীদের অধিকার ও উন্নয়ন, দরিদ্র ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মহিলাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কারিতাস বাংলাদেশের পরামর্শক নিয়োজিত হন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ভাটিকান পন্টিফিকাল কাউন্সিল ফর জাস্টিস এ্যান্ড পিস বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট লেখক, প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, এবং মানবাধিকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার জন্য বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে “মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মননা” প্রদান করেন।
( সংগ্রহীত লেখা )